কেন আমাদের ত্বকে ব্রণ হয়?
কেন আমাদের ত্বকে ব্রণ হয়?
ত্বক আমাদের শরীরের সবচেয়ে বড় অঙ্গ এবং এটি বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়, যার মধ্যে অন্যতম হলো ব্রণ। ব্রণ সাধারণত কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও যেকোনো বয়সে এটি হতে পারে। অনেকেই ব্রণকে শুধু একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা মনে করেন, কিন্তু এর পিছনে অনেক কারণ রয়েছে। এই প্রবন্ধে আমরা ব্রণের কারণ, প্রকারভেদ, প্রতিরোধের উপায় এবং চিকিৎসা সম্পর্কে বিশদভাবে আলোচনা করবো।
ব্রণ কী?
ব্রণ হল এক ধরনের চর্মরোগ যা তখনই হয় যখন ত্বকের রন্ধ্রে ময়লা, তেল এবং মৃত কোষ জমে যায়। এটি সাধারণত মুখ, কপাল, বুক, পিঠ এবং কাঁধে বেশি দেখা যায়। ব্রণের প্রধান লক্ষণগুলোর মধ্যে ব্ল্যাকহেডস, হোয়াইটহেডস, পিম্পল, সিস্টিক একনে ইত্যাদি অন্তর্ভুক্ত।
ব্রণের কারণ
১. অতিরিক্ত সেবাম উৎপাদন
আমাদের ত্বকের সেবাসিয়াস গ্রন্থি সেবাম নামক একধরনের তেল উৎপন্ন করে যা ত্বককে আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। তবে যখন সেবামের উৎপাদন বেশি হয়ে যায়, তখন এটি লোমকূপ বন্ধ করে দেয় এবং ব্রণ সৃষ্টি করে।
২. ব্লকড পোরস (বন্ধ রোমকূপ)
ত্বকের মৃত কোষ ও অতিরিক্ত তেল যদি স্বাভাবিকভাবে পরিষ্কার না হয়, তবে এটি রোমকূপ বন্ধ করে ফেলে। ফলে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি ঘটে এবং ব্রণ দেখা দেয়।
৩. ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ
Propionibacterium acnes নামক এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া আমাদের ত্বকে স্বাভাবিকভাবেই থাকে। তবে যখন এটি অতিরিক্ত বৃদ্ধি পায়, তখন ত্বকের প্রদাহ সৃষ্টি করে এবং ব্রণকে গুরুতর করে তোলে।
৪. হরমোনজনিত পরিবর্তন
কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে ব্রণের প্রধান কারণ হলো হরমোনজনিত পরিবর্তন। টেস্টোস্টেরন হরমোনের বৃদ্ধি সেবামের উৎপাদন বাড়িয়ে দেয়, যা ব্রণ সৃষ্টির অন্যতম কারণ।
৫. জেনেটিক প্রভাব
যদি পরিবারের অন্য সদস্যদের ব্রণের সমস্যা থেকে থাকে, তবে উত্তরাধিকার সূত্রে আপনিও এটি পেতে পারেন। গবেষণায় দেখা গেছে যে ব্রণ অনেকাংশেই বংশগত।
৬. খাবারের প্রভাব
দুগ্ধজাত খাবার, বেশি চিনি ও ফাস্ট ফুড খাওয়ার ফলে ইনসুলিনের মাত্রা বেড়ে যায়, যা ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে। কিছু খাবার যেমন চকলেট ও দুগ্ধজাত দ্রব্য ব্রণকে আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।
৭. চাপ ও মানসিক অবস্থা
অতিরিক্ত মানসিক চাপ শরীরে কর্টিসল নামক হরমোন বৃদ্ধি করে, যা সেবাম উৎপাদন বাড়ায় এবং ব্রণ সৃষ্টি করে।
৮. অপরিষ্কার ত্বক
যারা নিয়মিত ত্বক পরিষ্কার করেন না বা অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার করেন কিন্তু ঠিকমতো ধুয়ে ফেলেন না, তাদের ব্রণের সমস্যা হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
৯. ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
কিছু ওষুধ যেমন স্টেরয়েড, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল ও লিথিয়াম জাতীয় ওষুধ ব্রণের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
১০. অতিরিক্ত প্রসাধনী ব্যবহার
অতিরিক্ত মেকআপ বা তৈলাক্ত প্রসাধনী ব্যবহারের ফলে ত্বকের রন্ধ্র বন্ধ হয়ে যায়, যা ব্রণ সৃষ্টি করতে পারে।
ব্রণের প্রকারভেদ
✅ ব্ল্যাকহেডস (Blackheads): খোলা রোমকূপে তেল ও ময়লা জমে যাওয়ার ফলে এটি হয়। ✅ হোয়াইটহেডস (Whiteheads): বন্ধ রোমকূপের ভেতরে সেবাম জমে থাকলে এটি হয়। ✅ পাপুলস (Papules): ত্বকে লালচে ছোট ছোট গুটি যা ব্যথাযুক্ত হতে পারে। ✅ পাসটুলস (Pustules): ব্রণের উপরে পুঁজ জমে থাকে এবং এটি ফোটার মতো হয়। ✅ নোডিউলস (Nodules): গভীর ও কঠিন ব্রণ যা ব্যথাযুক্ত হয়। ✅ সিস্টিক একনে (Cystic Acne): সবচেয়ে গুরুতর ধরনের ব্রণ যা ব্যথাযুক্ত ও দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে।
ব্রণ প্রতিরোধের উপায়
🔹 নিয়মিত মুখ ধোয়া: তৈলাক্ত ত্বকের জন্য অয়েল-ফ্রি ফেসওয়াশ ব্যবহার করুন। 🔹 সঠিক স্কিনকেয়ার রুটিন অনুসরণ করুন। 🔹 তৈলাক্ত প্রসাধনী এড়িয়ে চলুন। 🔹 পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পান করুন। 🔹 স্বাস্থ্যকর খাবার গ্রহণ করুন। 🔹 মানসিক চাপ কমান। 🔹 ব্যক্তিগত তোয়ালে ও বালিশের কভার নিয়মিত পরিবর্তন করুন।
ব্রণের চিকিৎসা
1️⃣ ওভার-দ্য-কাউন্টার (OTC) চিকিৎসা: স্যালিসাইলিক অ্যাসিড, বেনজয়েল পারঅক্সাইডযুক্ত স্কিনকেয়ার প্রোডাক্ট ব্যবহার করা যেতে পারে। 2️⃣ চিকিৎসকের পরামর্শ: ডার্মাটোলজিস্টের পরামর্শ নিয়ে ওষুধ বা চিকিৎসা গ্রহণ করুন। 3️⃣ হোম রেমেডি: মধু, অ্যালোভেরা, টি-ট্রি অয়েল ব্যবহার করা যেতে পারে।
উপসংহার
ব্রণ একটি সাধারণ ত্বকের সমস্যা হলেও এটি সময়মতো চিকিৎসা করা উচিত। সঠিক জীবনযাত্রা, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস ও নিয়মিত স্কিনকেয়ার মেনে চললে ব্রণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। যদি ব্রণের সমস্যা গুরুতর হয়ে যায়, তবে অবশ্যই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।